গল্প | বৃষ্টি এসেছিলো বলে

বৃষ্টি এসেছিল বলে - মোঃ নোমান ভূঁইয়া


                 বৃষ্টি এসেছিলো বলে


সেই ভোর থেকে যে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল এখনও থামেনি ।যাকে বলা চলে মুশল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে।  তবে মাঝে মাঝে একটু থামলেও, পাঁচ সাত মিনিট পর আবার মেঘ গর্জন করে বৃষ্টিকে ডেকে নিয়ে আসে।
             
এই শীতল আবহাওয়ার মধ্যেও ইসমাত এখনও ঘুমাচ্ছে, যেখানে তার প্রাইভেট শুরু হবে সকাল আট-টায়। তার এ ঘুম যে সাধারণ ঘুম নয়, এ যে  স্বপ্নিল এক ঘুম। যেখানে স্বপ্ন তার পিছু ছাড়ে না, প্রতিনিয়তই তাকে আনন্দের সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু আজ সে অন্যরকম স্বপ্ন দেখছে যার প্রভাব বাহ্যিক দিক থেকেই বোঝা যাচ্ছে।সে এতক্ষণ মুচকি হাসছিল কারণ সে তার মনের মত স্বপ্ন দেখছিল,যেখানে সে তার প্রিয়তমার সাথে হাঁটছে আর নানান রকম কথা বলছে। এখানে, সেখানে ঘুরছিল। পার্কেও যায়, বসে আছে সেখানে । এইজন্যই তো তার মুখে সোনার বরণ মুচকি হাসি। কিন্তু সে এখন ভয়ে ঘুটিয়ে যাচ্ছে। তার প্রিয়তমা হঠাৎ তার কাছে নেই, সে তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। কোথাও যে নেই, কোথায় গেল? পুরো পার্কে বার বার চক্কর দিচ্ছে, দোলনার কাছে গিয়ে দেখছে, কফি শপ এ গিয়ে দেখছে সে যে কোথাও নেই।সে ভয় পাচ্ছে, লোমকূপ গুলো ঘাম ত্যাগ করে তার কপাল সিক্ত করছে। কথায় আছে না, যত ঠান্ডা ঘরে ঘুমানো হয়, স্বপ্ন ঠিক ততটা ভয়ংকর হয়ে উঠে।তার ভয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, হঠাৎ তার শরীরে আরও ঠান্ডা লাগতে শুরু করল, কাঁপছে সে। এরকম ভয়ংকর অনুভূতির সম্মুখীন সে আগে কখনও হয় নি। এ স্বপ্নই যেন এক ভয়ংকর রোমহর্ষক অ্যাডভেঞ্চার । হঠাৎ সে শুনতে পেল অন্ধকার থেকে তাকে কেউ ডাকে ডাকছে। " ইসমাত, ও ইসমাত। " এ আওয়াজ ক্রমশ বাড়ছে। কমবার কোন নামই নিচ্ছে না। এ শব্দগুলো তাকে ক্রমশ বিচলিত করে তুলছে।
              
ভয়ংকর স্বপ্নিল দেশে কিছুক্ষণ পর পর মেঘের গর্জন শোনা যাচ্ছে। তার মনে হচ্ছে যেন আকাশে মেঘের যুদ্ধ চলছে।হঠাৎ তার শরীরের উপর দিয়ে ঠান্ডা বাতাস বয়ে যায়। যা তার কাঁপা ও ভয়ের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করল। সে দেখছে তার প্রিয়তমা অন্ধকারে মিশে যাচ্ছে আর তাকে ডাকছে," ইসমাত,  ইসমাত। " ইসমাত সেদিকে ছুটল কিন্তু কিছুতেই তার প্রিয়তমার নাগাল পেল না। হারিয়ে গেল গভীর বিষাদময় অন্ধকার এক দেশে। যে দেশে একবার গেলে হয়তবা কেউ কেউ ফিরে, সবাই ফিরে আসতে পারে না। ইসমাত সেদিকে দৌড়ানো শুরু করল, হঠাৎ ঝাঁকুনির মত অনুভব করল আর চোখের চারপাশ শীতল হয়ে গেল।মা তার চোখে পানির ঝাপটা মারলো
কল্পনার জগত থেকে বাস্তবে ফিরে এলো ইসমাত। আরে! এ তো স্বপ্ন ছিল। শুধু শুধুই ভয় পেয়ে গেছিলাম।হাল্কা স্বস্তির হাসি ফুটে উঠল তার মুখে। এ হাসিটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি যখন তার মা বিরস কন্ঠে বলে উঠলেন, "কিরে আর কতক্ষণ ঘুমাবি? আটটা বেজে গেল তো।প্রাইভেটে যাবি না?"
বালিশের পাশ থেকে মোবাইলটা উঠিয়ে দেখে আটটা পাঁচ বাজে। "আরে!!! দেরী হয়ে গেল যে..." বলেই লাফিয়ে খাট থেকে নেমে বাথরুমে ডুকে গেল সে। বাথরুমের থেকে বেরুনোর সাথে সাথে মা বলেলেন, "আজ আর না যা....বাইরে বৃষ্টি বেড়ে গেছে।"
              
জলদি করে জানালার কাছে গেল ইসমাত, বাইরে তাকিয়ে হতাশ হলো ইসমাত। ঝুপঝুপ করে বৃষ্টি পড়ছে। তার ভেতর থেকে কেউ একজন নেড়েচেড়ে উঠল; হাল্কা কেশে বলল, "খুক খুক খুক... দেখ ইসমাত তোর স্বপ্ন সত্যি হবার আগেই তাকে বলে দে তোর মনের কথা। নতুবা সে হারিয়ে যাবে তোর কাছ থেকে চিরতরে। যা জলদি, আজই বলে দে তাকে। যা জলদি!"
            
ভেতরের কথাগুলো শুনে ইসমাতের মধ্যে অভূতপূর্ব তেজ জেগে উঠল, " না মা, আমি যাব। ছাতাটা দাও জলদি!"
***
কালো রঙের ছাতাটার উপর ঝুপঝুপ বৃষ্টি পড়ছে। আর ঠান্ডা বাতাস হঠাৎ হঠাৎ গা কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে ইসমাতের। প্রাইভেটের দেরী হয়ে যাচ্ছে আর এদিকে রাস্তায় কোন রিকসাই পাওয়া যাচ্ছে না। প্রয়োজনের সময় এদের এক বিশাল অংশ গা ঢাকা দিয়ে বসে থাকে।এদের পাওয়াই যায় না, একি বড্ড জ্বালা! আবার যখন ঠিক প্রয়োজন নেই, এই এরাই এসে বার বার ত্যক্ত করবে, "কই যাইবেন?" বলে বলে। 
তবুও আজ এই বৃষ্টিটাকে তার ভালো লাগছে। বড় বড় পা ফেলে সে এগিয়ে যাচ্ছে প্রাইভেটের দিকে। আর ভাবছে একজনকে নিয়ে। এখন তার ভাবনার জগতে একজনই ঘুরে বেড়াচ্ছে,  তাসমি।
তাকে প্রথমদিন দেখেছিলো একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। মিষ্টি কন্ঠে কবিতা আবৃত্তি করতে থাকা মায়াবী চেহারার মেয়েটিকে বড্ড ভালো লেগে যায় ইসমাতের। সেদিন কেবলই নামটা জানা ছিল। আর কিছুই জানতো না মেয়েটি সম্পর্কে। তাই পরে অনেক খুঁজেও মেয়েটার খোঁজ পায়নি।
           হঠাৎ একদিন তার বায়োলজি প্রাইভেটে মেয়েটি এসে হাজির। স্যারের কাছে সেই ব্যাচেই পড়া শুরু করলো সে।স্যারের কাছে ইসমাত ছাড়া আর কেউ তেমন পড়া দিতে পারতো না। আস্তে আস্তে সে জায়গা মেয়েদের মধ্যে একজনার দখলে চলে যায়, এবং মেয়েটি স্যারের প্রিয় ছাত্রী হয়ে উঠে। হ্যাঁ পাঠক আপনি বেশ বুদ্ধিমান, আপনি ধরে ফেলেছেন মেয়েটি কে।
               কিন্তু তাসমির প্রতি কোন হিংসে অনুভব করে না সে। উলটো কিভাবে তার সাথে দুদণ্ড কথা বলবে সে সুযোগ হাতড়ে বেড়াত সে। কিন্তু তেমন সুযোগ তার তেমন হয়ে উঠেনি। ইসমাত প্রতিযোগী মনোভাব দেখাত মেয়েটির সাথে।তাই মার্কস এবং পড়াশোনা নিয়ে দুএকবার কথা হয়ে যেত।মাঝে মাঝে নোটস চেয়ে নিত। কিন্তু এ পর্যন্তই। বাড়তি একটা কথার সুযোগ দেয়নি মেয়েটা।
        তাসমির সামনে গেলেই সে কেমন যেন ভয়ে কুঁকড়ে যেত। মুখে কোন কথাই আসে না। একেবারে চুপচাপ হয়ে যেত। তাই কখনও বাড়তি কোন কথা কিংবা বন্ধুত্বের হাত চেয়ে নেওয়ার মত কথা ইসমাত বলে উঠতে পারেনি।
             
ইসমাত এই প্রাইভেটে মেয়েটি আসার পর একদিনও মিস দেয়নি। নাহয় মেয়েটিকে যে সে দেখতে পাবেনা। একদিন না দেখলে যে তার ঘুম হয়না এমন অবস্থা।একমাত্র এই প্রাইভেটটাতেই তাদের দেখা হয়। কলেজ ভিন্ন তাদের। তাই যা হবার এই এক ঘন্টার মধ্যেই হতে হবে, যা করতে হবে এই এক ঘন্টার মধ্যেই করতে হবে। মেয়েটা সবসময় আটটার ঠিক পাঁচ মিনিট আগে আসে আবার ছুটি হলেই একটা রিকসায় উঠে চলে যায়। তাই তাকে কিছু বলে উঠার সময় সুযোগ ইসমাতের হয়ে উঠেনি।
            
***
প্রাইভেটের কাছাকাছি চলে আসতেই বৃষ্টি হঠাৎ করে কমতে শুরু করে। মনে মনে ঝেড়ে গালি ছাড়ল সে বৃষ্টির উপর। আরো কিছুক্ষণ আগে কমলে কি এমন হয়ে যেত বৃষ্টির??
ইসমাত প্রাইভেটে পৌঁছালো আট টা পঁয়ত্রিশে।
"কিরে আজ এত দেরী করলি যে??" স্যার কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকালেন ইসমাতের দিকে।
ইসমাত ইতস্তত করে জবাব দিলো, "ইয়ে মানে স্যার ঘুম ভাঙ্গতে আমার লেইট হইছিলো....."
"ব্যাটা মনে হয় স্বপ্ন দেখতাছিলো, স্যার" বলে উঠল রাজিব।
"উঁহু, রাতে বেশি চ্যাট করে ফেলছিলি??" ব্যঙ্গাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল রিদোয়ান। সাথে সাথেই সবাই হেসে উঠল। রাগত দৃষ্টিতে যেই না ইসমাত রিদোয়ানের দিকে তাকালো ওমনি সে চোখ সরিয়ে নিল।
ক্লাসে ডুকতে ডুকতে চোখ পড়ল তাসমির দিকে মেয়েটা হাসছিলো। এ হাসিটা যতবারই ইসমাত দেখে ততবারই তার ভেতরটা চুরমার হয়ে যায়। সে আবার ভাবুক হয়ে উঠল মুহূর্তেই।
"সাইলেন্ট" স্যার সবাইকে ধমক দিতেই সবাই চুপ হয়ে গেল। ইসমাতের দিকে তাকিয়ে বললেন,"ইসমাত বসে পড়!" 
ইসমাত বসে পড়ল এবং পাশের জন থেকে জেনে নিল কি পড়ানো হয়েছে।
           
"তাসমি" ডাক দিলেন স্যার।
তাসমি কি সুন্দর একটি নাম। শুনতেই বুকের ভেতরটায় তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। যেন ঢাকি ঢোল বাজাচ্ছে মদ্যপ হয়ে।তার থামার কোন জো নেই।
"জি স্যার..." মিষ্টি কন্ঠে তাসমির উত্তর।
"আজ তো কলেজ নেই কারো, একটা পরীক্ষা নেয়া যাক, কি বলো?"
"আচ্ছা স্যার!"
"অকে!"  স্যার সবাইকে একটা একটা করে প্রশ্ন তুলে দিলেন। কয়েকজন আপত্তি করলে স্যার জোর করেন।আর রিদোয়ান তো ইসমাতের কানের কাছে ফিসফিস করা শুরু করল, "এই মেয়েটা এক্কেবারে স্যারের খাঁটি চামচি।চামচার বিপরীত লিঙ্গ! নিজেরে বেশি ব্রিলিয়ান্ট ভাবে!"
ইসমাত কার পক্ষে কথা পক্ষে কথা বলবে ভেবে না পেয়ে প্রশ্নের দিকে একদৃষ্টে চোখ বুলানো শুরু করলো।
       
"আচ্ছা তোমরা পরীক্ষা দাও। আমি আসি। জরুরী কাজে একটু কান্দিরপাড় যাওয়া লাগবে। কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবো।তোমাদের একজনের ছাতা নিয়ে যাচ্ছি।"
"অকে স্যার" কেউ কেউ বলে উঠল।
আমার ছাতা নিয়ে যাচ্ছে নাকি? এ প্রশ্ন যাদের মনে জাগ্রত হলো তারা স্যারের গতিবিধির উপর চেয়ে রইল। আর বাকীরা প্রশ্নের উত্তর করতে ব্যস্ত তখনও।
          
স্যার চলে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর ইসমাতের মোবাইলে কল আসে, স্যার বলেন সবাই যেন পরীক্ষা শেষ হলে খাতা রেখে চলে যায়। স্যার আসতে বেশি লেইট হবে।
       আস্তে আস্তে সবাই খাতা একপাশে রেখে উঠে চলে গেল। তাসমিরও লেখা প্রায় শেষ। এবার রিভিশনের পালা।রিভিশন শেষে খাতা রেখে সেও চলে এলো।
মন খারাপ হয়ে যায় ইসমাতের, তার লেখা তখনও শেষ হয়নি যে!
             
খাতা জমা রেখে ছাতাটা নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো সে।
তার মন খুব খারাপ। আজ ভেবেছিলো তাসমিকে তার মনের কথা সব খুলে বলবে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। সব ভেস্তে গেল। কাঁদতে ইচ্ছে করছে তার। ছাতা খুলতে গিয়ে গেটের দিকে চোখ গেল তার। সেখানে তাসমি দাঁড়িয়ে। তাকিয়ে আছে বাইরের দিকে। ভ্রুঁ কুঁচকে গেল তার, "তাসমি এখনও যায় নি?"
      
***
      
গেইটের কাছে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাসমি।বাইরে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টির মতিগতি সে বুঝতে পারছে না। এই কমছে আবার এই বাড়ছে। বাইরে আনমনে তাকিয়ে থেকে ভাবছে তাসমি,
স্যার কই যে গেলেন? আমার ছাতাটাই পাইলেন নেয়ার জন্য? আর আমিও লেখায় মগ্ন ছিলাম, দেখিনি। দেখলেও কি মানা করতে পারতাম??ভাবতাম স্যার তাড়াতাড়িই ফিরবেন।আগে জানলে নিতুর সাথে চলে যেতাম।এটা কিছু হল?? এখন বাসায় যাব কিভাবে? এ রোডে আবার কোন রিকসাও নেই। বড় রাস্তা পর্যন্ত হেঁটে যাওয়া লাগবে। কিন্তু বড় রাস্তাও তো সামান্য হলেও দূরে! আর কতক্ষণ জানি দাঁড়িয়ে এ বৃষ্টির মধ্যে ওখানেও।আর ভিজেও যাব পুরাপুরি। যা বৃষ্টি হচ্ছে না! ইশ! কেউ যদি এখন এসে মাথায় ছাতাটা এগিয়ে দিয়ে বলতো, "চলো এগিয়ে দেই তোমায়!"
"তাসমি!"
পরিচিত এক কন্ঠের ডাক সুনে চমকে উঠল তাসমি।তার ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এলো সে। তাকালো উৎসের দিকে।
"বাসায় যাওনি এখনও?" বলল ইসমাত।
"না, যাব কিভাবে বলো? বাইরে যে বৃষ্টি। আর স্যার না আমার ছাতাটাও নিয়ে গেছেন।" অনুযোগের সুরে বলল তাসমি।
ইসমাতের ভেতরের ইসমাতটা আবার কাশি ঝেড়ে বলে চলেছে,  এই সুযোগ! এই সুযোগ, বলে দে, বলে দে।
তাই তার হৃদপিন্ডে দপদপানি বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।
ইসমাত ভেবে পাচ্ছে না ছাতা শেয়ারের কথা বলবে তাসমিকে? কিন্তু বললেও সেটা কিভাবে??
       
***
"ইসমাত তোমার পরীক্ষা কেমন হল?" নীরবতা ভালো লাগছিলো না তাসমির তাই জিজ্ঞেস করল।
"হ্যাঁ, হ্যাঁ ভালোই।আর তোমার?"
"এই তো, ভালোই!"
" অও চল তোমাকে বড় রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দেই। আমার সাথে ছাতা শেয়ার করতে কোন অসুবিধা হবে না তো?"
বাংলা অনুচ্ছেদ গড়গড় মুখস্ত বলে ফেলার মত কথা দুটি বলে ফেলল ইসমাত। তাসমি কিচ্ছুক্ষণ চেয়ে থাকে।কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। একবার ভাবছে যাবে কিনা! আবার পরক্ষণেই তা বাতিল করে দিচ্ছে। স্যার আসতে বেশি দেরী হতে পারে। আর বাসায় লেট করলে টেনশন করবে তাই বলে দিল,"আচ্ছা চলো।" আর মনে মনে খোদার শুকরিয়া আদায় করল।
         
নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারলো না ইসমাত। সে এগিয়ে  গেল তার কাছে, ধরল ছাতাটা মাথার উপর। দুজন একসাথে গেট পার হয়ে রাস্তার একধারে হেঁটে যাচ্ছে।দুজনই চুপচাপ। কেউ কোন কথা বলছে না। ইসমাতের মনের দপদপানি আরো বেড়ে গেল।কারণ, তার ভেতরের ইসমাত তাকে বার বার তাগাদা দিচ্ছে।নিজের সাথে ক্রমাগত ঝগড়া করে চলছে সে।
"কিছু বলবে?" বলল তাসমি।
"হ্যাঁ ছাতাটা তোমার হাতে নাও। আমার হাত ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে যে।" নিজের কথা শুনে নিজেই বেকুব হয়ে গেল ইসমাত।
তার ভেতরের ইসমাত বেশ গমগমা সুরে বলে উঠল, "বেশ জ্বালা হলো তো তোকে নিয়ে।"
"চুপ!" ধমক ছাড়ল নিজের প্রতি।
"কি??" তাসমি অবাক চোখে তাকাল।
"না কিছু না, স্যরি!"
        
বৃষ্টি বাড়তে শুরু করেছে। চারদিক আরো অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত। ছাতার একটু বাইরে চলে যাওয়ায়  ইসমাতের গা ভিজে যাচ্ছে। সে ঠান্ডায় কাঁপছে। আর মনে মনে আউড়িয়ে চলেছে, "I Love U TASMI, I Love U TASMI,I Love U TASMI,I Love U TASMI......."
হঠাৎ কাছে কোথাও বাজ পড়ল। বাজের প্রভাবে তাসমি একটু দূরে সরে গেল। তাসমিকে ছাতা ধরতে ডাকতে গিয়ে ভুলে বলে ফেলল, I Love U TASMI!
চারদিক ঘন অন্ধকারাচ্ছন্ন। হঠাৎ হঠাৎ আলো চমকাচ্ছে।  সেই আলোয় তাসমি পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে ইসমাতের নিষ্পাপ চোখে ঝরে ঝরে পড়ছে ভালোবাসার অনুনয়-বিনয়। আর ঠোঁট ক্রমাগত কাঁপছে।ইসমাতের চেহারায় যেন এখন অন্যরকম দ্যুতি ছড়াচ্ছে।
তাসমি বলল, "কি বললা?"
"I Love U... "
"কি বললা?"
"I Love U TASMI" এবার একটু জোরেই বলল ইসমাত।
"শুনিনি ছাতার নিচে এসে বলো!"
ছাতার নিচে এসে নয়, একেবারে মুখোমুখি হয়ে, চোখের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থেকে বলল, "তাসমি, আমি তোমায় ভালোবাসি.. প্রথম যেদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তোমায় দেখেছি এরপর থেকে আর কাউকে নিয়ে আমি ভাবতে পারিনি....."
তাসমি একগাল হেসে বলল, "S2U"
বলেই ছাতা হাতে দ্রুত হাঁটা শুরু করল...
ইসমাত থ দাঁড়িয়ে থেকে পেছন থেকে বলল, "মানে???"
তাসমি বলল, "একটা রিকসা খুঁজে দাও, তারপর বলছি!"
"আচ্ছা!" বলে এগিয়ে যাচ্ছে ইসমাত।
        
বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি তাদের। বড় রাস্তার ধারেই একটি খালি রিকসা দাঁড়িয়ে ছিল। ছাতাটা তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে সেটায় উঠল তাসমি।
ইসমাত অস্থির হয়ে বলল, "মানেটা বলে যাও প্লিজ।"
কানের কাছে এসে  তাসমি বলল, "SAME TO YOU"
          কিছুক্ষণ লাগল ইসমাতের বুঝতে। তারপর একগাল হেসে দিল সেও।
        
রিকসা চলা শুরু করল । ইসমাত একদৃষ্টে তাকিয়ে সেদিকে।তার কানে কেবলই একটি বাক্য গুণগুণ করছে, SAME TO YOU, SAME TO YOU, SAME TO YOU....
রিকসার পেছনের পর্দাটা তুলে তাসমিও ইসমাতের দিকে তাকিয়ে ছিল যতক্ষণ না একজন আরেকজনার চোখের আড়াল হয়ে গিয়েছিলো।
                     (সমাপ্ত)
উৎসর্গঃ বন্ধু Ismat Doha Mishel​​ কে 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ