একটি বিচিত্র দিবস উদযাপন

 একটি বিচিত্র দিবস উদযাপন
দিনটা  ২৫ শে মার্চ। এই দিনের শুরু তথা মধ্যরাত ১২:০৫ মিনিট থেকে একটু আলাদা করার ভূত চাপে।প্রথমে প্ল্যান ছিল সারারাত জেগে থাকব অর্থাৎ এক ফোঁটাও ঘুমাবো না রাতে।এরপর আস্তে আস্তে আরো কিছু প্ল্যান যুক্ত হয় যার ফলে দিনটা আরো বেশি উপভোগ্য আরো বেশি অ্যাডভেঞ্চারস হয়ে উঠে।এটা ছিল একধরণের লড়াই। একজন স্বপ্নময় ব্যক্তির লড়াই। নিজের অস্তিত্বকে ফিরে পাবার লড়াই।

পূর্বকথাঃ

এক লেখকের(আবুল ফাতাহ) স্ট্যাটাস পড়ে কিছুটা না অনেকটা চিন্তিত হই।
স্ট্যাটাসটা ছিলঃ


" 'ভাল্লাগে না' নামে একটা রোগ আছে। এই
রোগের প্রথম উপসর্গ আপনার কোনো কাজই
ভাল লাগবে না। দ্বিতীয় উপসর্গ একটু পর
পর মুখ দিয়ে না হলেও অন্তর থেকে
'ভাল্লাগে না' 'ধুর বাল, ভাল্লাগে না'
টাইপ শব্দ বেরিয়ে আসবে। খাওয়ার প্রতি
তীব্র অনীহা ও ডিপ্রেশন বিশেষভাবে
লক্ষণীয়। শুরুতে যেমনই মনে হোক, এই রোগ
আত্মহত্যার প্রাথমিক স্টেজ হিসেবে
বিবেচিত হয়। এই রোগের কোনো ওষুধ
আবিষ্কার হয়নি। তবে ব্যক্তিগতভাবে
আমার অবজারভেশন বলে এই রোগের
উৎপত্তি একঘেয়ে চলমান জীবন থেকে।
তাই এই রোগমুক্তির জন্য জীবনে খানিক
বৈচিত্রের প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের
দুর্ভাগ্য আমাদের জন্য কোনো অভ্র নেই
যে আমাদের জন্য 'এক বৈচিত্র দিবস'
পালন করবে ঘটা করে। তবে সুখের কথা হল
মানুষ চাইলে নিজেই নিজের বৈচিত্র দিবস
পালন করতে পারে। আপনার জীবনে নতুন
কিছু নিয়ে আসুন। নতুন কোথাও ঘুরতে যান,
নতুন কোনো বন্ধু খুঁজুন কিংবা নিদেন পক্ষে
নতুন কোনো রাস্তায় উদভ্রান্তের মত
হাঁটাহাঁটি করুন।"

আমিও এরকম মানসিক অস্থিরতায় ভুগছি।

চলুন গতরাত্রির গল্পটা বলা যাক:

রাত: ১২:০৩ মিনিট
'আমি এরকমই'কেন যেন আবার শব্দ দুটো বলে ফেলেছি। আজকাল শব্দদুটি ঠোঁটের আগায় থাকে। কেউ তাচ্ছিল্য করে কিছু বললে সাথে সাথে বলে ফেলি।আবার নিজের মানহানি করলাম।নিজেকেই জুতাপেটা করতে ইচ্ছা হচ্ছে।
(এরকম মানসিক অস্থিরতা প্রায়ই শুরু হয়)

নাহ, আর পারা যায় না। কিছু একটা করতে হবে। এই জীবনে কিছুটা বৈচিত্র্য আনতে হবে। আজ সারারাত জেগে থাকলে কেমন হয়?

***

রাতের যখন  ১:৪৪ টা বাজে তখন,
ভাবলাম ফেসবুকে স্ট্যাটাস মেরে দেই। এতে কেউ যদি সারারাত জেগে থাকে তার সাথে চ্যাটিং করে রাত পার করে দেয়া যাবে। দিয়ে দিলাম।
এরপর দোস্ত Mahfujul Hasan Shojib আরMozammel Hoshen Chowdhury​
এর সাথে গ্রুপ চ্যাট করা শুরু করলাম।কেটে যাচ্ছিল সময় ভালো ভাবেই। সাথে বর্ষাকে নিয়ে প্যাঁচালে জড়ালাম মাহির,মিতু,প্লাবণ,আর শাইখের সাথে। আবার মিতু ও শাইখকে মাঝে মাঝে ম্যাসেজিং এ ডিস্টার্ব করছিলাম। তবে ২:৩০ মধ্যে সবাই ঘুম দিয়া দিল আমারে একা ফেলে।সাথে সাথে মোবাইলে গান লাগিয়ে বিশিষ্ট লেখক "আবুল ফাতাহ'র " উপন্যাস "প্রহর শেষে"  পড়া শুরু করলাম। দারূণ একটা বই।একাকী বই পড়ে যখন কাটছিল সময় তখন কমেন্ট চ্যাটিং এ লেগে গেলাম আরেক লেখক "তালহা তামিমের " সাথে। লেখক ভাইয়ের সাথে চ্যাটিং, মোবাইলে গান, ফেসবুক দিয়ে চলে গেল ৫ টার কাছাকাছি । এরপরে আম্মাকে জাগাতে গেলাম কারণ এই পরীক্ষার অন্তত দুদিন আগে এই সময়ে জাগি আর কফি পান করি।আজকেও পড়ার বাহানা দিয়ে কফি চেয়ে বসলাম। মজার ব্যাপার হল আমার চোখে ঘুম না থাকলেও আম্মু ঠিকই ধরে ফেলেছিলেন।তারপর তাকে এটা সেটা বুঝিয়ে কফিটা ভাগিয়ে নেই।

এরপর আজান দিল।নামাজ পড়িলাম। কফিটা কিন্তু নামাজের পর পেয়েছিলাম।কফিটা সুরুত সুরুত করে গিলেই বের হয়ে এলাম অচেনা সময়ে চিরচেনা কুমিল্লা চষে বেড়াব বলে। সত্যি বলতে এর আগে কখনো এত তারাতাড়ি বাইর হই নাই।প্ল্যান ছিল কমপক্ষে ৩০ মিনিট টানা দৌড়াব।

বের হয়ে দৌড় শুরু। উল্লেখ্য আমার বাসা মদিনা মসজিদ রোডে। আমি একদৌড়ে গেলাম কান্দিরপাড় । একটা জিনিস দেখলাম মিনিট যত বাড়ছে তত লোকও বাড়ছিল। জিলা স্কুল হয়ে ঈদগাহ মাঠের মাঝ বরাবর দৌড়িয়ে চলে গেলাম ধর্মসাগর পাড়ে।অবাক করার বিষয় ছিল ঐ সকাল বেলায়ও অনেকে খেলছিল। তাও ক্রিকেট। তখন সময়টা ৬:৩৫মিনিট।এক মামার সাথে সাক্ষাত হয় সেখানে। আবার আমাদের স্যার জনাব ওয়ালিউল্লাহ সরকার স্যারের সাথেও দেখা হয়।কথাও হয়।

এরপর ধর্মসাগড় হয়ে ফয়জুন্নেসার সামনে দিয়ে যাওয়া । দৌড় আর দৌড়। ক্লান্তি লাগছিল। মেরুদণ্ড যেন নুইয়ে পড়বে  বুকের ডান বাম উভয় দিকে প্রচন্ড ব্যাথা হতে লাগল।তারপরেও মন দৃঢ় ছিল। শরীরে কিছু  শক্তি ছিল।আমার মনে একটা কথাই ছিল,"They have a dream, I have a dream"

  এরপর প্রতিভা কোচিং হয়ে গঙ্গা কোচিং পর্যন্ত দৌড়ানোর পর বুঝলাম পা টনটন হয়ে আছে।হাঁটা কষ্ট হচ্ছিল। এরপরেও ঐ একই কথা মনে করে হাঁটা  শুরু করলাম।বাকীটা পথ হেঁটেই বাসায় ফিরলাম।
বাসায় সামনে যখন গেলাম তখন আমার শরীর যেন ভেঙ্গে পড়ে যাবে। ঘামে জবজবে ছিল গা। ক্যাপ টা ভিজে গেছে। ৫ তলা বেয়ে কিভাবে উঠব? মনে করলাম আবার উক্তিটা,"They have a dream, I have a dream"। অদ্ভূত একধরণের শক্তি পেলাম। উঠে চলে গেলাম বাসায়।

এরপর ১০ মিনিটা তব্দা খাওয়ার মত বসে থেকে গোসল করতে গেলাম। এই গোসলে অন্যরকম অনুভূতি ছিল।গোসল করে নাস্তা করতে যখন গেলাম তখন বাজে ৮ টা।

সবাই কি আহ্লাদে আম্মুর বানানো তেলের পিঠা খাচ্ছে।পিঠা নাকি অনেক মজা হয়েছে। পিঠা মুখে দিতে হাত কাঁপছিল, মুখে পুরে চিবোতে চিবোতে বুঝতে পারলাম আমার মস্তিষ্কের স্বাদ বোঝার ক্ষমতা ঠিকভাবে কাজ করছে না।বিপদে পড়লাম, স্বাদহীন বস্তু কিভাবে খাওয়া সম্ভব? কোন রকমে খেয়েদেয়ে এলাম রুমে। মোটামুটি ঢুলছিল। আবার সেই বই টা হাতে নিলাম,প্রহর শেষে। ১১৬ পৃষ্টা যেন পড়ছিলাম। আবার পড়া শুরু করলাম খাটে শুয়ে শুয়ে। সেখানেই বাঁধল বিপত্তি।ঘুমিয়ে পড়লাম এক ঘুমে দিনের ২ টা বাজে উঠলাম। বইটা পাশেই ছিল দেখি ১৫০ নং পৃষ্টা খোলা।

এরপরের সময়টুকু স্বাভাবিকই যায়। তবে বিশেষকারণে রেলস্টেশন এ গেছিলাম। বিকাল হতে বাকীটা সময় আর বিচিত্রভাবে কাটেনি।আগের মতন নীরস ভাবে।

...........
এরকম করার কারণঃ

কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করছিলাম, আমি নিজের অস্তিত্ব থেকে দূরে সরে যাচ্ছি।অতিমাত্রায় অলস হয়ে যাচ্ছি।না পড়তে পারছি, না সাহিত্যচর্চা। এমন এক পর্যায়ে চলে গিয়েছিলাম। মানসিক সমস্যা বললে কম হবে না। একঘেয়েমি জীবন, অলসতা আর বিষন্নটা এর কারণ। প্রতিদিন একই গতিতে জীবন চলছিল।যার ফলে ভাল্লাগেনা রোগটার শুরু হল। কোন কাজই ভালো লাগতো না। নিজের আত্মসম্মান প্রতি ক্ষেত্রে খোয়াতে লাগলাম।কারণ একা থাকা, একাকীত্ব আমার মানসিকতার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। যার দরূন নিজের ট্র্যাক থেকে সরে আসছিলাম।মনোবল পুরোপুরি হারাতে বসেছিলাম।কোন কাজে মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হয়েছিলাম। এরকম করতে থাকলে একসময় আত্মহত্যা করতে হতে পারে।কারণ "ভাল্লাগেনা " রোগটি আত্মহত্যার প্রাথমিক পর্যায়।এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে দরকার মাঝে মাঝে রিগুলার জীবন থেকে আলাদা কোন কাজদ করা। একটা বিচিত্র দিনের খুব প্রয়োজন।আজ তাই করলাম।আরেকটা

যা বুঝলামঃ

প্রত্যেককে একটা বিচিত্র দিবস পালন করা উচিৎ। নিজের মত করে। ভিন্নভাবে। আজকে এভাবে পালন করলাম,আরেকদিন অন্যভাবে।মাঝে মাঝে এরকম দিন পালন করলে মন্দ হয় না ।  সপ্তাহে এভাবে কয়েকদিন পালন করার ইচ্ছা আছে। এ কার্যক্রমে মনোবল অদৃশ্য শক্তি জুগিয়েছে, "They have a dream, I have a dream."

উদ্দেশ্যঃ

১. শাস্তি অতি অলসতার।
২. মনোবল বৃদ্ধি।
৩.নিজের মানসিক সমস্যাটার থেকে সাময়িক পরিত্রান।
৪. মনে করানো নিজেকে "They have a dream, I have a dream."

যা পেলামঃ

আজকের বিচিত্র দিবস পালন আমার শরীর টাকে আরেকটু সহনীয় করে তুলল।মনোবল বৃদ্ধি করল।এত বড় পোস্ট লেখাও তার উদাহরণ । অলসতার পরিমাণ কিছুটা কমেছে।যারা বলেছিলেন,পাগল হয়েছি নাকি? আসলে পাগল যাতে না হই তার জন্যই এ বিচিত্র দিবস পালন।আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। নিজের সক্ষমতা থেকেও অনেক বেশি শ্রম করেছি।করতে পারবো জানা ছিল না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ